প্রতিষ্ঠার পটভূমিঃ

গাবুরা একটি দ্বীপ ইউনিয়ন। পূর্ব পুরুষদের ঘাম ঝরানো কায়িক পরিশ্রম আর রক্ত ঝরানো অর্থ ব্যায়ের মাধ্যমে প্রায় দুইশ বছরেরও পূর্বে আবাদ হয়েছে গাবুরা। প্রাথমিক পর্যায়ে পূর্ব পুরুষদের একমাত্র চিন্তা ছিলো গাবুরায় বসতি স্থাপন করে অনাবাদি জমি আবাদ করে সাগর-নদীর লোনা পানি থেকে মুক্ত হয়ে বাল-বাচ্চা নিয়ে মোটা ভাত মোটা কাপড়ে দিন কাটানো । তারা সামাজিক শান্তি শৃংখলা বজায়,গোষ্ঠীগত কিংবা পরিবার ভিত্তিক সৌহার্দ্য – সম্প্রীতি স্থাপন ও ধর্মীয় বিধি-বিধান মান্যতায় যথেষ্ঠ সচেষ্ট থাকলেও শিক্ষা-দীক্ষায় ও ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখায় তেমন কোন প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়নি। তবে বৃটিশ আমল থেকে বাড়ি কিংবা পাড়া ভিত্তিকি কিছু পাঠশালা ও মক্তবে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনার চল শুরু হয়। চুলার ছাইয়ের সাথে পানি মিশিয়ে কালি, পাকা কঞ্চি কেটে কলম এবং তালপাতায় ঐ কালি-কলমের আঁচড় টেনে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক অক্ষর জ্ঞান দেওয়া হতো। গ্রামের দু-একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি ঐ সব পাঠশালায় পন্ডিতের দায়িত্ব পালন করতেন। ধীরে ধীরে সরকারী পর্যায়ে কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠলেও তা ছিলো খুবেই নগন্য । তৎকালীন থানা বা মহকুমা পর্যায় থেকে কিছু ব্যাক্তি জি.টি কিংবা ম্যাট্রিক পাশ করে ঐ সব বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা শিখাতেন।
৮ম শ্রেণি পর্যন্ত দু-একটি জুনিয়র স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলেও তৎকালীন সরকারী স্বীকৃতি পাওয়া ছিলো খুবেই দূরহ ব্যাপার। তবে গাবুরা গোপাল লক্ষ্মী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঐ প্রক্রিয়ার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত (১৯৪৭ সালের পূর্বে) বৃটিশ শাসনামলে দেশের অন্যান্য প্রেক্ষাপটে নতুন আবাদকৃত জনপদ গাবুরার শিক্ষা ব্যাবস্থা ছিল নিতান্তই অবহেলিত। গ্রাম্য মক্তব বা পাঠশালার ছাড়াও বহিরাগত মৌলবীদের (বাড়িতে লজিং রেখে) তত্ত্বাবধানে গাবুরার বিদ্যোৎসাহী কিছু ব্যক্তি কিংবা গোষ্টী বিশেষ পরিবারে ছেলে-মেয়েদের আরবি বা ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা হতো । এক্ষেত্রে বরিশালের মুন্সি বলে খ্যাত এক মৌলবী সাহেবের নাম উল্লেখযোগ্য ৷ এলাকার শিক্ষা সম্প্রসারণে প্রথমে যে ব্যক্তিটির নাম উল্লেখ করতে হয় তিনি হলেন গাবুরার গাইন পরিবারের মরহুম নুর আলী গাইন । পিতা স্বনামধন্য মরহুম গোপাল গাইনের দশ পুত্রের মধ্যে কনিষ্ট পুত্র তিনি । জমি-জমায় ও অর্থ-সম্পদে গাইন পরিবারের খ্যাতি ছিলো। মরহুম নুর আলী গাইন সাহেবের পৈতৃক কিংবা নিজদ্ব সম্পত্তি রক্ষায় শ্যামনগর সদরের নকিপুর জমিদার বাড়িতে অবস্থিত তৎকালীন কালেক্টরেট অফিসে প্রায়শই যাতায়াত করতেন। নকিপুর হরিচরণ পাইলট হাইস্কুল তখন প্রতিষ্ঠিত একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঐ এলাকার ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার্থী পোষাক ও বই খাতা বগলে নিয়ে স্কুলে যাতাইয়াত তার মনে দাগ কাটে। নিজের এলাকার ছেলে-মেয়েদেরও ঐ রূপ শিক্ষাদানে আকাঙ্খা সৃষ্টি হয়। বাড়ী এসে অন্যান্য সহোদর ভাইদের সাথে পরামর্শ করে তৎকালীন গাবুরার বিভিন্ন এলাকায় গণ্যমান্যদের সহযোগিতা নিয়ে গাইনবাড়ীতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্তের ফসল বর্তমান গাবুরা গোপাল লক্ষী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সংক্ষেপে গাবুরা জি. এল. এম. মাধ্যমিক বিদ্যালয় । যতোদূর জানা যায়, ঐ সময়ে স্কুল প্রতিষ্ঠায় মরহুম নুর আলী গাইনের সাথে তার পরিবারের ভ্রাতাগণসহ গাবুরার শিক্ষা সম্প্রসারণে আরো এগিয়ে আসেন সোরা গ্রামের শিক্ষনুরাগী মরহুম নুর আলী সরদার , চাঁদনীমুখার মরহুম জি.এম তোরাব আলী, খোলপেটুয়ার মরহুম আব্দুল লতিফ খান ও মরহুম শেখ আহম্মদ আলী, কালীবাড়ির মাস্টার কার্তিক চন্দ্র মন্ডল, জেলেখালীর মৃত নৃপেণ মৃধা ও কেদার বিশ্বাস, ডুমুরিয়ার খতিব উদ্দীন তরফদার, চকবারার এস. এম. তমিজ উদ্দিন আহম্মদ ও প্বার্শেমারীর মহতাব উদ্দীন মাস্টার প্রমুখ ব্যাক্তিগণ সহ আরো শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ (আল্লাহ সকলের খেদমত কবুল করুন)।
সভাপতির বাণী

প্রতিষ্ঠানের পরিচালকবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, শিক্ষার্থীদের ও সর্বোপরি এলাকাবাসীর সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল। এলাকাবাসীর সেবার মনোভাব নিয়ে মান সম্পন্ন শিক্ষা প্রসারে এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জন করে এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে একটি স্থান করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ক্ষেত্রে সফলতার জন্য মানুষের মাঝে এক ধরনের চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা তাঁদের কোমলমতি ছেলে মেয়েদের এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করাতে যথেষ্ট আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে অভিভাকগণের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ প্রসংশনীয় অবদান রাখছে। সবকিছুর মূলে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের অটুট শৃঙ্খলা, শিক্ষকগণের একাগ্রতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের মধ্যে সমন্বয় সাধন। শিক্ষার্থীদেরকে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের রয়েছে বিরামহীন চেষ্টা ও পরিকল্পনা।
অধ্যক্ষের বাণী

দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার গাইন পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় এলাকার একদল বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তির নিরলস প্রচেষ্টার ফসল গাবুরা জি, এল, এম, মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৪৬ সাল থেকে অদ্যাবধি গাবুরা ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষার বাতিঘর হিসাবে স্বমহিমায় প্রজ্জলিত, যা যুগের পরে যুগ বিভিন্ন প্রজন্মকে জ্ঞানদানে এক অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত, অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও জ্ঞানের মশাল হিসাবে অকাতরে জ্ঞান বিলিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়টি । সক্রিয় ও শিক্ষাবান্ধব ম্যানেজিং কমিটির নির্দেশনায় ও একদল উদীয়মান শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগী মনোভাব সৃষ্টি, স্বপ্ন দেখানো, সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গঠন, নিজেকে জানা, সর্বোপরি পরিবার, সমাজ, ও দেশের একজন সচেতন ও নৈতিক নগরিক হিসবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ বিদ্যাপীঠের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ফলশ্রুতিতে বিদ্যালয় টি উপজেলা তথা জেলার প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃত। প্রতি বছর ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্ত প্রাপ্তিসহ জে.এস.সি ও এস.এস.সি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ পেয়ে শতভাগ পাশের স্বাক্ষর রেখে আসছে। ছয় যুগেরও বেশী সময় ধরে এ বিদ্যাপীঠের হাজারো শিক্ষার্থী সমাজ সেবা ও শিক্ষা প্রচারের ব্রত নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে কানাচে ও বহির্বিশ্বে । স্বপ্নের সেই বটবৃক্ষ আজ ফুলে ফলে সুশোভিত। এ বিদ্যাপিঠের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবিসহ সমাজে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিবর্গ ।